আপডেট প্রতিদিন, ধূপগুড়ি, বেবি চক্রবর্ত্তী:- বর্ষার দিনে স্কুলে যাওয়া কত কঠিন, তা জানেন শুধু গ্রামের মানুষেরাই। ছাতা না থাকায় অনেক পড়ুয়া ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হয়। বানারহাট ব্লকের চানাডিপা গ্রামের উত্তর শালবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই সমস্যার সমাধান করেছেন এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে।
ডুয়ার্সে কয়েক দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি চলছে সেই কারনে খুদে পড়ুয়াদের অনেকেই স্কুলে আসতে পারেনি। বৃষ্টি হলেই স্কুলের ছাত্রের সংখ্যা কমে যেত। কেন আসছে না পড়ুয়াড়া, খোঁজ নিতে ছাত্রদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত সাহা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল অনেকের বাড়িতে ছাতা নেই আবার কারো বাড়িতে মাত্র একটা ছাতা সেটা নিয়ে বাবা বা মা দাদা কেউ কাজে বের হয়েছে। গত মে জুন মাসে টানা কয়েক দিন কড়া রোদ যাকে বলে একেবারে চাঁদি ফাটা রোদ। সে সময়ও স্কুলের ছাত্র ছাত্রী উপস্থিতি কম ছিলো । তাই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা বসে চিন্তা ভাবনা করেন কি করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তখনই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত সাহা সিদ্ধান্ত নেয় পড়ুয়াদের মধ্যে ছাতা বিতরণ করবেন। তাহলে পড়ুয়ারা হয়তো খুলে আসতে পারবে। কারণ গরমের সময় ছাতা ব্যবহার করা যাবে এবং বর্ষার সময়ও ছাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে আসতে পারবে তারা। এমন ভাবনা তেমন কাজ। স্কুলের চারজন শিক্ষক শিক্ষিকা তখনই সিদ্ধান্ত নেন তারা নিজেরা টাকা দিয়ে ছাতা কিনে দেবেন ছাত্র ছাত্রী দের হাতে।এই এই বিষয়টি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নাগেশ্বর ওরাবের সাথেও কথা বলেন। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর জন্য কেনা হয় ছাতা। এদিন স্কুলের ক্লাস শেষে ঠিক আগ মুহূর্তে সমস্ত পড়ুয়াদের হাতে রং বিরং এর ছাতা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।সেদিন উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য নাগেশ্বর ওরাও। ছাতা হাতে পেয়ে রীতিমতো খুশি পড়ুয়ারা।
বানারহাট ব্লকের শালবাড়ি ১ নং গ্রামপঞ্চায়েতের চানা ডিপা গ্রামের উত্তর শালবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রশান্ত সাহা বলেন, ছাতা না থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারছিলেন না। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলাম। এই কারণে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ৪৭ টি রঙিন ছাতা তাদের হাতে তুলে দিলাম ।
।অপর শিক্ষক সুশান্ত কুমার দে বলেন ছাতা হাতে নিয়ে ছাত্র ছাত্রী দের মুখের হাসি দেখেই আমরা তৃপ্ত। স্কুলের তিনজন স্থায়ী একজন পার্শ্ব সহ চারজন মিলে নিজেদের অর্থ দিয়ে ৪৭ জনের হাতে ছাতা দেওয়া হয়। আমাদের এই স্কুলের পাশে চা বাগান ফরেষ্ট কিছু কৃষি এলাকা রয়েছে প্রত্যন্ত এই এলাকার ছাত্র ছাত্রী দের হাতে কিছু দিতে পেরে আমরা খুশি। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নাগেশ্বর ওরাও বলেন, শিক্ষকরা অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন। গ্রামের অনেক পড়ুয়ার পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে অনেক দিন আনে দিন খায়। তাদের ছাতা কেনার টাকা পর্যন্ত নেই। তাই স্কুলের শিক্ষকরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে খুশি পড়ুয়ারা। আমরা চাই প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকদের তরফে এই ধরনের কিছু করা উচিত পড়ুয়াদের জন্য।