আপডেট প্রতিদিন, অরুণাচল প্রদেশে, বেবি চক্রবর্ত্তী:- ভারত সরকারের নেতৃত্বে ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে অরুনাচল প্রদেশে। প্রজেক্টের নাম দিবাং বহুমুখী প্রকল্প। ভারত ও চীনের ৩,৫০০ কিলোমিটার লম্বা সীমানা এলএসি বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছে একটি সংবেদনশীল এলাকায় এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। যার জন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্ট্রাটেজিক ভাবেও এই প্রজেক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভারতের জন্য। অরুনাচল প্রদেশের নিম্ন দিবাং অঞ্চলে মুনলি গ্রামে দিবাং নদীর উপর এই প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। অরুনাচল প্রদেশের উপজাতি সম্প্রদায় দিবাং নদীকে সিকাঙ্গ নামে ডাকে। এই দিবাং নদী, লোহিট নোদী ব্রহ্মপুত্র নদীর উপনদী। স্থানীয় মানুষজন প্রথমে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করেছিল, তবে বর্তমানে সেইসমস্যা সমাধান হয়েছে এবং প্রকল্পে কাজ ও শুরু হয়ে গেছে। ২,৮৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে ৩১৯ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা খরচ হবে বলে জানা গেছে। এই প্রজেক্টে ২৭৮ মিটার লম্বা ও ৩৭৫ মিটার লম্বা কংক্রিটের একটি মাধ্যাকর্ষন বাঁধ নির্মান করা হবে যা নির্মান সম্পূর্ন হলে এটি ভারতের সবচেয়ে উচ্চতম বাঁধ হতে চলেছে।দিবাং বহুমুখী প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে ন্যাশানাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা এনএইচপিসি । ৪৩ কিলোমিটার লম্বা একটি জলাধার তৈরি হবে যার জল ধারন ক্ষমতা থাকবে ৩.৮৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে থাকবে ১২টি টার্বাইন, যার প্রতিটি ২৪০ মেগাওয়াট করে মোট ২,৮৮০ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।

এই বাঁধ চীনের হাইড্রো ওয়েপনস স্ট্রাটেজি বা জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করবে। চীন, তিব্বতকে কেন্দ্র করে জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা শুরু করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম মালভূমি তিব্বত থেকে প্রচুর নদীর উদ্ভব হয়েছে। সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, ইয়াংতের মতো এশিয়ার গুরুত্বপূর্ন নদীগুলো তিব্বত থেকেই উৎপন্ন হয়েছে। ভারত ও চীনের জলের জন্য তিব্বত থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীগুলোর উপরেই সবচেয়ে বেশী নির্ভরশীল। ১৯৫১ সালে চীন তিব্বত দখল করে নেয়, এরপর থেকেই তিব্বতের মতোন গুরুত্বপূর্ন ভৌগলিক অঞ্চল ও তার নদীগুলোর নিয়ন্ত্রন চীনের অধীনে চলে যায়। চীনের মতো বিশ্বের অন্য কোনও দেশের কাছে এত নদীর জল নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা নেই। বর্তমানে এটার-ই সুবিধা নিচ্ছে চীন। ২০৬০ সালের মধ্যে চীন শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য নিয়েছে যার জন্য তিব্বতে প্রচুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করেছে চীন। যেমন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর চীন ২০টি বাঁধ নির্মান করছে যাতে চীনে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। চীন এসব বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে তিব্বতের নদীগুলোর জল ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রন করতে পারে। চীন চাইলে অতিবৃষ্টির সময় বাঁধ খুলে দিয়ে নিম্নাঞ্চলের দেশগুলোতে কৃত্রিম বন্যা তৈরি করতে পারে আবার প্রয়োজনে বাঁধে জল আটকে দেশগুলোতে কৃত্রিম খরা তৈরি করতে পারে। ভারতে মোট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার এক তৃতীয়াংশের বেশী অরুনাচল প্রদেশই উৎপন্ন করতে সক্ষম। ভারতে ১,৪৮,৭০১ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে যার মধ্যে ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৫০,৩২৮ মেগাওয়াট অরুনাচল প্রদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। উচ্চ পার্বত্যঞ্চল এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারনে এই অঞ্চলকে খুব ভঙ্গুর বলা হয় যার জন্য স্থানীয় মানুষজন সম্ভাব্য ভূমিধ্বসের আশঙ্কা করে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করছিলো দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে সেই সব সমস্যা মিটিয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প সম্পূর্ন করার লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে।