আপডেট প্রতিদিন, বেবি চক্রবর্ত্তী:- মায়াপুর(Mayapur) শ্রীরামকৃষ্ণ চন্দ্রমনী সেবা সমিতি বেলুড় মঠের শাখা রূপে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই মঠের সহসম্পাদক স্বামী বোধসারানন্দজী এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এটি চন্দ্রামনী দেবীর জন্মস্থান অর্থাৎ ঠাকুরের মাতুলালয়। জায়গাটা কোলকাতা থেকে আরামবাগ যাবার পথে পড়ে। ভবিষ্যতে জয়রামবাটি কামারপুকুর যাবার পথে এই মঠটি দেখে যেতে পারেন।
১৮৬৮ সালের কথা। সস্ত্রীক মথুরবাবু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁর ভাগ্নে হৃদয় কে নিয়ে ট্রেনে চড়ে তীর্থে চলেছেন। ট্রেন ছুটেছে কাশীর উদ্দেশ্যে। একটা স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। ঠাকুরের এতোক্ষণ কি আর ট্রেনের মধ্যে ভালো লাগে! তিনি তাই নেমে পড়েছেন স্টেশনে। সঙ্গে হৃদয়ও। ঠাকুর কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফের ট্রেনে তুলতে। উদ্বিগ্ন মথুর বাবু। জনমানবহীন অপরিচিত স্টেশন। ঠাকুর তো আপন মনে প্ল্যাটফর্মের এক গাছের নিচে গিয়ে বসেছেন। এদিকে গাড়ির হুইসিল দিয়েছে। ঠাকুর নির্বিকার। ভাগ্নে হৃদয় চিলচিৎকার জুড়ে দিয়েছে। মথুরবাবু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ট্রেন ছেড়ে দিলো। সত্যিই ছেড়ে দিলো। ঠাকুর পড়ে রইলেন প্ল্যাটফর্মে। সঙ্গে ঠাকুরের আচরণে প্রচন্ড ভেঙে পড়া ভাগ্নে হৃদয়। এবার কী হবে?
স্টেশন মাস্টারের কাছে ছুটলো হৃদয়। পরের ট্রেন কখন? মাস্টারমশাই জানালেন, আজ আর ট্রেন নেই। পরের ট্রেন আসবে আগামীকাল। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো হৃদয়ের। এদিকে একথা শুনে তো ঠাকুর নাচতে শুরু করেছেন… “ওরে হৃদয়, এবারেই তো খেলা জমবে। ওরে দেখ এবার মা কী করে!” হৃদয় তো ঠাকুরের কথা শুনে রেগে আগুন… ” হ্যাঁ, তোমার মা রেল কোম্পানি খুলবে!”
হৃদয় যত রাগে, ঠাকুর ততই আনন্দ পান। তাঁর মধ্যে উদ্বেগ,দুশ্চিন্তা তো দূরের কথা, তিনি আনন্দে টগবগ করে ফুটছেন। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে প্ল্যাটফর্মে বসে থাকার পর হঠাৎ সেই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে এসে বললেন, ” আপনাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। রেলের একজন খুব বড় অফিসার একটি সেলুন কার নিয়ে কাশি চলেছেন। তিনি কিছুক্ষণ এই প্ল্যাটফর্মে থামবেন। আপনাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ওনাকে অনুরোধ করতে পারি।” কিছুক্ষণ পর একটা অত্যন্ত সাজানো গোছানো ট্রেন এসে হাজির হল সেখানে। ট্রেন থেকে যিনি নামলেন, তিনি রাজেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের মস্ত অফিসার। বাড়ি বাগবাজার। ঠাকুর কে এই অবস্থায় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে এলেন তিনি। ঠাকুর তাঁকে না চিনলেও তিনি চেনেন। রাজেনবাবু বলেন, “এ কী অবস্থা আপনার! কোথায় যাবেন?” ঠাকুরও তো কাশিই যাবেন! রাজেনবাবু তো প্রণাম করে ঠাকুর কে তাঁর ট্রেনে তুলেছেন। এ ট্রেন একদম অন্যরকম। পুরু গদিওলা সোফা, সামনে টেবিল, জানলায় পর্দা। যেন বাড়ির বিলাশবহুল বৈঠকখানা। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। রাজেন্দ্রলাল বাবু অস্ফুটে বলে উঠলেন, দক্ষিণেশ্বরের দেবতাকে নিয়ে চলেছি কাশির দেবতার কাছে। আর এদিকে ঠাকুর তো মিটিমিটি হাসছেন আর ভাগ্নে হৃদয়ের দিকে চেয়ে বলছেন… “হ্যাঁ গা, কী বুঝলি…?”
সিদ্ধপুরুষ সাধনার দ্বারা ধীরে ধীরে সিদ্ধ হন। অবতার জন্ম থেকেই সিদ্ধ। (মায়াধীন) পুরুষ মায়া অবলম্বন করে হয়ত সিদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু অবতার মায়ায় বদ্ধ নন। অবতারকে বলা হয় মায়াধীশ। অমৃতকথায় স্বামী ভূতেশানন্দ বলেছেন যে তোমরা যখন কোন অন্যায় কাজ কর, তখন ভেতর থেকে তিনি তোমাদের সাবধান করেন ঠিকই। কিন্তু কান পাতোনা বলে শুনতে পাও না। যাদের শান্ত স্বভাব, তারা তাঁর ইঙ্গিত শুনতে পারে ও বুঝতে পারে। সবাই পারে না। মন শান্ত রাখবে, শুদ্ধ রাখবে। তবেই তাঁর ইঙ্গিত বুঝতে পারবে। যা পবিত্রতা থেকে দূরে রাখে তাই হল পাপ। যে কাজে কল্যাণ হবে তা হল ভাল কাজ। যে কাজে অকল্যাণ হবে সেটি খারাপ কাজ। আর যে কাজে কল্যাণ -অকল্যাণ কিছুই হবে না তা হল স্বাভাবিক কাজ।