আপডেট প্রতিদিন, কলকাতা, বেবি চক্রবর্ত্তীঃ- গত মাসের শেষ দিকে নবান্নের সভা থেকে কলকাতা সহ রাজ্যে হকার নিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠক থেকে তিনি দাবি করেছিলেন যে, ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা এ রাজ্যের রাস্তায় হকারি করতে এসে রাস্তা এবং ফুটপাত দখল করে নিচ্ছে।এবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিকেই কার্যত মান্যতা দিয়ে দিল কলকাতা পুরনিগমের হকার সমীক্ষা। কেননা সেই সমীক্ষায় এমন হকারদের সন্ধান পেয়েছে, যাঁরা মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। কেউ কেউ আছেন উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত থেকেও। আর আছেন ওড়িশার মানুষেরা। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় উঠে এসেছে কলকাতা শহরের রাস্তা ও ফুটপাতের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছেন ভিন রাজ্যের বাসিন্দারাই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা পুরনিগমের তরফে ১৫০ জন পুরকর্মীকে হকার সমীক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সমীক্ষার কাজ করতে এক একটি হকার জ়োনে কমবেশি ১০টি করে দল নেমেছিল। প্রতিটি দলে ৪-৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ওই কাজ শুরু করেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি এমন ‘টিম’ নামানো হয়েছিল। কোন রাস্তায় কত হকার বসছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য অ্যাপে নথিভুক্ত করতে বলা হয়। সমীক্ষক দলটি যে তথ্য এবং নথি হাতে পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা শহরে হকারি করে কার্যত রাজত্বপাট চালাচ্ছেন ভিন রাজ্যের বাসিন্দারাই। সমীক্ষায় নেমে হকারদের কাছ থেকে তাঁদের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, আধার নম্বর, প্যান ইত্যাদি সংগ্রহ করছিল পুরনিগমের সমীক্ষক দলগুলি।
ওই সমস্ত তথ্য হাতে আসার পরেই কলকাতা শহরে ভিন রাজ্যের হকারদের উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে আসার কথা জানতে পেরেছেন কলকাতা পুরনিগমের শীর্ষ আধিকারিকেরাও।কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে তা পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেই রিপোর্টে ভিন রাজ্যের বাসিন্দাদের কলকাতা শহরে হকারি করার বিষয়টি উল্লেখ করা হবে। যে হেতু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই সমীক্ষা হচ্ছে, তাই ওই বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। চলতি মাসের শেষে কিম্বা অচলতি মাসের শেষে কিম্বা অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সমীক্ষার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাবে। তার পরে তা জমা পড়তে পারে নবান্নে। ২০১৫ সালের তালিকা অনুযায়ী কলকাতা শহরে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার হকার থাকার কথা। কিন্তু সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, গত ৯ বছরে ওই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৫ লক্ষ হকার রয়েছেন এখন শহর কলকাতার বুকে। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, কলকাতা শহরের উড়ালপুলগুলির নীচে হকার-সহ পাকাপাকি ভাবে দোকান ও ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলার মতো বিষয়টিও পুরনিগম যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। শহরের অনেক জায়গায় কাগজকুড়ানি, গৃহহীন, ভবঘুরেরা রাতে ফুটপাথেই থেকে যাচ্ছেন। বিশেষত, উড়ালপুলগুলির নীচের অংশ ‘দখল’ করে নিচ্ছেন। তাঁদের সরাতে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।