আপডেট প্রতিদিন, বেবি চক্রবর্ত্তী, কলকাতা:- ক’দিন আগের ঘটনা। কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, সুব্রত বক্সীকে ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আপনি রদবদলের ব্যাপারটা নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে একবার বসুন। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে ডেকে এর আগেও একবার কথা বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।সে বারও আলোচনার বিষয় ছিল সরকার ও সংগঠনে রদবদল। দিদির পরামর্শের পর এবার দু’জনে এখনও পর্যন্ত কথা বলেছেন কিনা তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে সূত্রের দাবি, যে কোনও দিন জেলাস্তরে সাংগঠনিক রদবদলের ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। ওই সূত্রের মতে, ‘বক্সীদা মানে সিলমোহর। আইপ্যাকের সমীক্ষার ভিত্তিতে অভিষেক রদবদলের যে নকশা তৈরি করেছেন, তা নিয়ে রাজ্য সভাপতি সামান্যতম আপত্তি করবেন, এমনটা প্রবীণ বক্সীদার চরিত্রে নেই। তা ছাড়া জেলাওয়াড়ি সংগঠনের বহু নেতাকে সুব্রত বক্সী ব্যক্তিগত ভাবে চেনেনও না। মুকুল রায়ের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে তাঁর একটা মৌলিক ফারাক রয়েছে। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে, অভিষেক যে বদলের প্রস্তাব করবেন সেটাই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।এখন কৌতূহলের বিষয় হল, কী ধরনের বদল হতে পারে জেলাস্তরের সংগঠনে?
এ ব্যাপারে গোড়ায় একটা ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছিল। তা হল, যাঁরা লোকসভা ভোটে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের আর জেলার দায়িত্বে রাখা হবে না। কিন্তু পরে মনে করা হচ্ছে, এই ফর্মুলা সব জায়গায় খাটানো যাবে না। যেমন, কৃষ্ণনগরের জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে মহুয়া মৈত্রকে সরানো হতে পারে। মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি পদ থেকে আবু তাহেরকে সরানোও হয়তো সময়ের অপেক্ষা। উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতির পদ থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর সম্ভাবনাও আঠারো আনা। তা ছাড়া যাদবপুর লোকসভা আসনে জেতার পর সায়নী ঘোষকেও যুব সভানেত্রীর পদ থেকে সরানো হতে পারে। কিন্তু বাঁকুড়ার জেলা সভাপতি পদ থেকে অরূপ চক্রবর্তীকে হয়তো সরানো নাও হতে পারে। কারণ, বিকল্প মুখ নেই। তা ছাড়া বাঁকুড়ার তালড্যাংরা বিধানসভার উপ নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল ব্যবধানে জিতবে বলে দল মনে করছে। এর পর অরূপকে সরানোর খুব একটা যৌক্তিকতা হয়তো থাকবে না।
আসন্ন এই রদবদলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেওয়া হতে পারে উত্তরবঙ্গের সংগঠনে। রাজনীতির ব্যাপার স্যাপারে অনেকেরই স্মৃতি খুব দুর্বল। কিন্তু একটু পিছনে হাঁটলে দেখা যাবে এ বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে কোচবিহারের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবকে মঞ্চে ওঠার ‘পাস’ দেওয়া হয়নি। পরে সুব্রত বক্সীর কাছে কাকুতিমিনতি করে অনুমতি পেয়েছিলেন গৌতম। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাও পাননি। অনেকের মতে, উত্তরবঙ্গে ব্যাপক রদবদলের যে সম্ভাবনা রয়েছে তার একটা ইঙ্গিত এই ক্ষুদ্র ছবিতেই ধরা ছিল। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার বাদে প্রায় সব জেলারই জেলা সভাপতি বদল করা হতে পারে। সেই সঙ্গে ব্লক স্তরেও বহু নেতাকে সভাপতির পদ থেকে সরানোর সম্ভাবনা প্রবল। দক্ষিণবঙ্গেও কয়েকটি সাংগঠনিক জেলায় বদল অনিবার্য বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন কাঁথি ও তমলুক—এই দুই সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদল করা হতে পারে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরে বদল হলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের সংগঠনে হয়তো কোনও বদল হবে না। বরং মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে আরেকটু উচ্চতা দিতে তাঁকে বিধানসভার উপ নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। সভাপতি বদল করা হতে পারে পুরুলিয়া জেলাতেও। তা ছাড়া অবধারিত ভাবেই বদল করা হবে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। জেলা ও ব্লক স্তরে সংগঠনের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে পদ থেকে সরানো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটা সহজ সূত্র রয়েছে। মোটামুটি ভাবে যে সব পুরসভায় অধিকাংশ ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল, সেখানে বদল একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, জেলায় বড় সমস্যা হল অনেক জেলা সভাপতি নিজের গোষ্ঠীকে নিয়ে চলেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলেন না। নতুন সভাপতি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এমন মুখ তুলে আনা হবে যাঁর জেলায় ও জেলা সংগঠনের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই সঙ্গে কর্তৃত্বের সঙ্গে পূর্ণ সময় দিয়ে সংগঠন চালাতে পারেন। কারণ, মনে রাখতে হবে বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এই রদবদল করা হবে। তাই প্রোডাক্টিভ টিম তৈরি করতে চান অভিষেক।
জেলা সংগঠন ও পুরসভা স্তরে এই বদলের পর রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও একটা রদবদল হতে পারে। সে বিষয়ে কার্যকারণ অবশ্য পৃথক ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।