আপডেট প্রতিদিন, বেবি চক্রবর্ত্তী:- পরিবারে লোকজনদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসকের দেহ লোপাট করা হয়েছে এই অভিযোগে শুক্রবার আরজি কর হাসপাতাল(R G Kar Hospital) চত্বর দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হলে তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। এরপর বিকালের দিকে হাসপাতাল চত্বরে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাম ছাত্র যুব সংগঠনের সদস্যরা জড়ো হন। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দাবি করেন পুলিশের কাছে বারবার নিহত তরুনীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানালে পুলিশ এই আরজি মানেননি। তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে টালা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ তরুণীর বাবা মাকে হাসপাতাল থেকে বের করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তখনই উত্তেজিত হয়ে পড়ে বাম ছাত্র যুব সংগঠনের সদস্যরা। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি এবং বিক্ষোভ শুরু হয়। সুবিচারের দাবিতে শ্লোগান দিতে শুরু করে বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল চত্বরে বিজেপির অগ্নিমিত্রা পল সহ একাধিক নেতা-নেত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে। রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অগ্রিমিত্রা ফল বলেন ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশের সাহায্যে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনার ফলে হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। পোস্ট গ্রেজুয়েশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আরজি কর হাসপাতাল। ময়না তদন্তের পরে রাতে তার দেহ বের করা হলেও পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ময়না তদন্তের পরে মহিলা চিকিৎসকের দেহ কেন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না তা নিয়েও রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মৃত তরুনীর বাবা বলেন ” জানিনা আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেল? ডেড বডিটা নিয়ে চলে গেল “।
এই একই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভকারী এক চিকিৎসক বলেন তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করে মৃতদেহ লুট করে নিয়ে গেল পুলিশ। পুলিশ কেন তদন্ত করতে ভয় পাচ্ছে এই প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা। যদিও এই বিষয় পুলিশের তরফ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই বিষয়ে বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলে আরো বলেন যে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হলো সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিভাবে ময়নাতদন্ত করতে পারে? যাদের এলাকায় খুন হচ্ছে তারাই কিভাবে ময়না তদন্ত করতে পারে। এরই মধ্যে চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় আরজি কর হাসপাতাল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিটি নেতৃত্বে আছেন হাসপাতালের ডিন। ইতিমধ্যেই হাসপাতালে এসেছেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় স্বতপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে।হাসপাতাল এর জরুরী বিভাগের চারতলায় ওই চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কারণ দেহ যখন উদ্ধার করা হয়েছিল তখন পোশাক অবিন্যস্ত ছিল। আরো অভিযোগ উঠেছে যে সেমিনার হলে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছে সেই হলে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তৃণমূল বিধায়ক নির্মাণ ঘোষ হাসপাতালে এসে দাবি করেন চিকিৎসককে যে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে ২২ বছরের তরুণীকে। তিনি আরো দাবি করেছেন পুলিশ এবং প্রশাসন গুরুত্বসহকারে ঘটনার তদন্ত করছে। যদিও বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের অভিযোগ সকাল থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসকাও প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন।