আপডেট প্রতিদিন, বেবি চক্রবর্ত্তী :- আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(RG Kar Hospital) মহিলা চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর(Doctor Murder Case) কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে একাধিক নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। শ্বাসরোধ করেই হাসপাতালের ওই মহিলা চিকিৎসককে খুন করা হয়েছিল। এছাড়াও চোখে যে ক্ষত পাওয়া গেছে তা স্বাভাবিক নয় বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ওই মহিলা চিকিৎসকের গোপনাঙ্গে ক্ষত দেখা গেছে। তাতেই ধর্ষন করে খুনের ঘটনার অভিযোগেই সিলমোহর দিচ্ছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট।
এদিকে হাসপাতাল থেকে দেহ রীতিমতো হাইজ্যাক করে পুলিশ নিয়ে গেছে।
মৃতের বাবা-মা অভিযোগ করেছিলেন মেয়ের মৃতদেহ তাদের দেখতে দেওয়া হয়নি। প্রথম থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার তত্ত্ব খাঁড়া করতে চেয়েছিলেন। তার পরিবারকে সকালে ফোন করে জানানো হয়েছিল তাদের মেয়ে অসুস্থ। তারপরে তারা জানান তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সকালেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। তারপরেই যায় ফরেন্সিক টিম। এরপরই পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ স্পষ্ট হতে থাকে। এই ঘটনার পর পড়ুয়া ছাত্ররা জরুরী পরিষেবা ছাড়া আর কোন পরিষেবা দেবেন না বলে জানিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।ফরেন্সিক টিম পরীক্ষা করে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে গলায় আঘাত পাওয়া গেছে। চোখেও ক্ষত ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এদিকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ চরম আকার নিয়েছে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষে নিজের কলেজে ঢুকতে দিতে নারাজ পড়ুয়ারা। বিক্ষোভকারীরা সকাল থেকেই প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে তার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। সকাল থেকে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন তারা। জাভেদ খান এবং স্বর্ণকমল সাহা হাসপাতালে পৌঁছলে তাদের গো ব্যাক স্লোগান দেন পড়ুয়ারা। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন, সন্দীপ ঘোষকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। রাজনীতির রং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে লাগুক সেটা তারা চান না। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক স্বর্ণ কমল সাহা এবং জাভেদ খান পৌঁছতেই শেখ পৌঁছতেই জুনিয়ার চিকিৎসক এবং পড়ুয়ারা স্লোগান দিতে শুরু করেন।
তাদের অভিযোগ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজকে তারা আর জি কর হাসপাতালের হাতে দিতে চান না। এই কারণে তারা সন্দীপ রায়কে তারা অধ্যক্ষ পদে মানবেন না। আরজিকর হাসপাতাল থেকে সোমবার সন্দীপ রায় অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদে তাকে নিয়োগ করা হয়। জানা গেছে স্বাস্থ্য দপ্তর তার ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেনি। আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে থাকার সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এইজন্য চিকিৎসকের একাংশ তার উপরে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। সন্দীপ রায়ের সঙ্গে কি স্বাস্থ্য দপ্তরের কোন প্রভাবশালীর যোগ রয়েছে সেই জল্পনা এখন শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আরজি কর হাসপাতালে ঘটনার দিন পুরো বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ। এমনকি নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গেও তিনি কথা বলেননি। তারপরেই তার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
এই অবস্থায় এখন চাপ বাড়লো আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়ের। কলকাতা হাইকোর্ট সন্দীপ রায়কে নতুন নিয়োগপত্র এবং তার গতকালের পদত্যাগ পত্র নিয়ে কোর্টে আসতে বলা হয়েছে। সঙ্গে আরজি করের কেস ডাইরি ও তলব করা হয়েছে। সন্দীপ রায় কে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে বসানোর পরেই সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন কিভাবে নির্যাতিতার মা-বাবাকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখা হলো? তিনি বলেছেন দুপুর তিনটে পর্যন্ত তাকে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। সেটা না করলে করা সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। সোমবার আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়। তাহলে কি তার পদত্যাগ পুরোটাই পরিকল্পিত ছিল? সাজানো ঘটনা এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এই ঘটনা নিয়ে প্রধান বিচারপতি সন্দীপ রায় কে ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি বলেছেন কতটা প্রভাবশালী লোক তিনি, যিনি সকালে চাকরি ছাড়লেন আর বিকালে তাকে অন্য পদে বহাল করা হলো। কিসের পুরস্কার দেওয়া হলো তাকে। বিকাল তিনটের মধ্যে তাকে ছুটিতে চলে যাওয়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি না হলে বড় সিদ্ধান্ত নেবে হাইকোর্ট।