আপডেট প্রতিদিন, বেবি চক্রবর্ত্তী ৯ই জানুয়ারি :- ব্রহ্মচারী বিনোদ তখন পরাধীন ভারতবর্ষে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনর সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বিপ্লবী দল মাদারিপুর সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯১৪ সালে ফরিদপুর ষড়যন্ত্র মামলায় বিনোদকে গ্রেফতার করে প্রথমে মাদারিপুর ও পরে ফরিদপুর জেলে আটক করা হয়। তিনি পরে অগ্নিদগ্ধ হৃদয় নিয়ে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় বিপ্লবীদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতেন। এমনকি তাঁদের খাবার ব্যবস্থা করতেন।
এই বিনোদ আসলে ছিলেন যুগাচার্য্য শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ। তিনি গোরক্ষপুরের মহাযোগী বাবা গম্ভীরনাথজীর নিকট ১৯১৩ সালে ১৭ বৎসর বয়সে তিনি দীক্ষালাভ করেন এবং ১৯১৬ সালে মাত্র ২০ বৎসর বয়সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। ১৯২৪ সালে প্রয়াগে অর্দ্ধকুম্ভমেলায় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরির নিকট আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ পূর্বক স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। ১৮৯৬ সালে ২৯ জানুয়ারি বুধবার মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে মাদারিপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামে বিষ্ণুচরণ ভূঞা ও মাতা সারদাদেবীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন।
বাল্য নাম ছিল বিনোদ। গ্রামটি ছিল সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। জমিদারের অত্যাচার থেকে প্রজাদের বাঁচাতে গিয়ে বিনোদনের পিতা বিষ্ণুচরণ ভুঁইয়া মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য গৃহদেবতা নীলরুদ্রের শরণাপন্ন হন তিনি। ভক্তের কাতর প্রার্থনায় দেবাদিদেব মহাদেব শিব প্রসন্ন হয়ে তাকে দর্শন দান করেন ও বলেন “ভয় নেই আমি তোমার পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করবো। আমার জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ই তোমাদের বিপদের মেঘ কেটে যাবে।” তিনি বর্তমান বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলায় কুমার নদী থেকে প্রায় এক মাইল দূরে বাজিতপুর গ্রামে বিষ্ণুচরণ ভুঁইয়া ও সারদা দেবীর সন্তান। বিষ্ণুচরণ ছেলের জন্মের পর দীর্ঘদিনের পুরোনো মামলায় জয়ী হয়েছেন, তাই ছেলের নাম রাখেন “জয়নাথ”। পরে নাম দেওয়া হয় বিনোদ। তিনি বুধবার জন্মে ছিলেন বলে তাঁর নাম হয় বুধো।
সিদ্ধি লাভের দীর্ঘ ৮ বৎসর পর ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াগধামের অর্ধকুম্ভের সময় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরি মহারাজের কাছ থেকে থেকে ব্রহ্মচারী সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন। তখন তার নাম হয় “আচার্য স্বামী প্রণবানন্দ।” উক্ত বছরেই মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে তিনি চিহ্নিত প্রথম সাত জন সঙ্ঘ সন্তানকে সন্ন্যাস দীক্ষায় দীক্ষিত করনে।আশ্রম স্থাপনের জন্য তিনি ভারত সেবাশ্রম সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি আশ্রম স্থাপন করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রচন্ড ঝড়ের ফলে বহু লোক মারা গেলে তিনি সেবার কাজে এগিয়ে আসেন। সেবাকার্য শেষে মাদারিপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধে “মাদারিপুর সেবাশ্রম” স্থাপিত করেন। এর কিছুবছরের মধ্যে খুলনা, নওগাঁ, আশাশুনি প্রভৃতি জায়গাতে সেবাশ্রম স্থাপিত হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতার বাগবাজারে ডিস্পেনসারী লেনে ঘর ভাড়া করে কলকাতায় প্রথম আশ্রম স্থাপন করা হয়। ঐ বৎসরেই ভাদ্র মাসে ১১৮নং শোভাবাজার ষ্ট্রীটে ১৮ টাকা ভাড়ায় দুইখানি কোঠা ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কলিকাতা আশ্রম স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে ২৭নং বহুবাজার ষ্ট্রীটে আশ্রম উঠিয়া আসে। ইং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ১৬২ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটে আশ্রম স্থানান্তরিত হয়। ইং ১৯২৭ খ্রীঃ জুলাই মাসে ২৪/৩, মীর্জ্জাপুর স্ট্রীটে এটি বতর্মানে সূর্য্যসেন স্ট্রীট আশ্রম উঠিয়া আসে। পরে বালিগঞ্জে ডিহি শ্রীরামপুর লেনে কয়েক মাস থাকার পর ইংরেজি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে সঙ্ঘের প্রধান কার্য্যালয় ২১১, রাজবিহারী এভিনিউ, বালিগঞ্জে নিজস্ব জমি ও বাড়ীতে স্থাপিত হয়।১৯৪১ সালে ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি দেহ ত্যাগ করেন।